বিজ্ঞান কংগ্রেস কী এবং কেন

সায়েন্স ফেয়ারের সাথে মোটামুটি সকলেই পরিচিত। বিশেষত আমাদের রাজধানীতে স্কুল-কলেজের ক্লাবগুলোর আয়োজনে প্রায় মাসেই দুটো-তিনটা করে সায়েন্স ফেয়ার হয়। তাহলে বিজ্ঞান কংগ্রেস আলাদা কেন?

আগে একটু ভেবে দেখি, বিজ্ঞান কী? অ্যারিস্টটলকে চেনে না এমন মানুষ খুজে পাওয়া দুষ্কর। তিনি বিজ্ঞানের বেশ কিছু শাখার জনক। কিন্তু আমরা কি কোথাও তার নামের আগে বিজ্ঞানী বিশেষণটা শুনেছি? এরিস্টটলের পরিচয় কিন্তু বিজ্ঞানী না, দার্শনিক। কেন?

বিজ্ঞান বলতে আধুনিককালে সায়েন্টেফিক মেথড (বৈজ্ঞানিক কার্যপদ্ধতি) মেনে পাওয়া কোন ফলকে বুঝায়। বৈজ্ঞানিক কার্যপদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে পরীক্ষণ। এ ব্যাপারে নোবেলজয়ী বিখ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যানের একটা উক্তি আছে—

“It doesn't matter how beautiful your theory is, it doesn't matter how smart you are. If it doesn't agree with experiment, it's wrong.”

এরিস্টটল বিজ্ঞানী নন কেননা তিনি সায়েন্টেফিক মেথড মানেননি, তাঁর মতামত প্রমাণ করে দিয়ে যাননি। মানুষ দেড় সহস্র বছর এরিস্টটলের কথাকে বেদবাক্য ধরে মেনে এসেছে।

আমাদের দেশের সায়েন্স ফেস্টে ঠিক এটাই হয়। “সায়েন্স প্রজেক্ট” নামক প্রতিযোগীতাগুলোতে প্রত্যেকে তাদের একেকটা আইডিয়া নিয়ে আসে। সাথে সুন্দর একটা মডেল বানায়। কিন্তু তাদের আইডিয়াটা কাজ করবে কি না তা টেস্ট করে না। যেহেতু এক্সপেরিমেন্ট নেই, তাই এরিস্টটলের কাজের মত এগুলোও বিজ্ঞান নয়।

এই গতানুগতিক ধারার বাইরে সত্যিকারের বিজ্ঞান গবেষণার সাথে পরিচয় করানোর জন্যই বিজ্ঞান কংগ্রেসের যাত্রা। বিজ্ঞান কংগ্রেসে আমরা এরিস্টটল চাই না। এখানে কত সুন্দর মডেল বানানো হলো তার কোন গুরুত্ব নেই। সায়েন্টেফিক মেথড অনুসরণ করা হলো কি না সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। সাথে কংগ্রেসে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান গবেষণা প্রকাশের অন্য দুটো মাধ্যমের সাথে পরিচিত করা হয়। কলেজ পার করে গেলে বিজ্ঞানের গবেষণা কিন্তু প্রজেক্ট হিসেবে নয়, বরং পোস্টার আকারে বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিতে হয়। আর বিশ্বব্যাপী বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকাশের গ্রহণযোগ্য মাধ্যম হচ্ছে রিসার্চ পেপার। বিজ্ঞান কংগ্রেসে প্রজেক্টের পাশাপাশি পোস্টার এবং পেপারের জন্য আলাদা ক্যাটাগরিতে গবেষণা গ্রহণ করা হয়।


ছবি: শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেস ২০১৫

কীভাবে অংশ নিতে হয় কংগ্রেসে?

কংগ্রেসে তিনভাবে অংশ নেয়া যায়—

  • পেপার

  • পোস্টার

  • প্রজেক্ট

পেপার ও পোস্টারের জন্যে গবেষণার কাজ অনেকটাই একই রকম। তাই একই গবেষণাকে ইচ্ছা করলে পেপার বা পোস্টার—যেকোন ভাবেই উপস্থাপন করা যায়। আর প্রজেক্টের ক্ষেত্রে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে তোমার প্রজেক্ট যেন মানুষের কোন না কোন কাজে লাগে। প্রজেক্টগুলো সাধারণত কোন সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে করা হয়। অপরদিকে পেপার বা পোস্টারের গবেষণার এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

কংগ্রেসে তিনটা ক্যাটাগরি আছে—

  • তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি প্রাইমারি

  • ষষ্ঠ থেকে নবম জুনিয়র

  • দশম থেকে দ্বাদশ সিনিয়র ক্যাটাগরি।

কংগ্রেসে একক বা সর্বোচ্চ তিনজনের দল হিসেবে অংশ নেয়া যায়। দলের সদস্যদের মধ্যে একই স্কুল বা একই ক্যাটাগরির কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে একই দলে একাধিক ক্যাটাগরির সদস্য থাকলে সবচেয়ে বড় যে তার ক্যাটাগরি বিবেচিত হবে। একজন কেবল একটা গবেষণাই উপস্থাপন করতে পারবে।

রেজিস্ট্রেশন

কংগ্রেসে প্রথমে কনসেপ্ট পেপার জমা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। প্রায় একমাস ধরে কনসেপ্ট পেপার জমা দেয়ার সময় থাকে। কনসেপ্ট পেপারে তোমার গবেষণা সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখতে হবে। সাধারণত গবেষণার শিরোনাম, বিষয়বস্তু, কার্যপদ্ধতি এবং অনুমিত ফলাফল লিখতে হয়। যদি কনসেপ্ট পেপার লেখার সময় রিসার্চ শেষ হয়ে যায় তবে ফলাফলসহ বাকি অংশটাও সংক্ষিপ্তভাবে লিখতে পারো।

তুমি যদি কংগ্রেসের অংশ নেয়ার জন্য নির্বাচিত হও, তাহলে কনসেপ্ট পেপার জমা দেয়ার কদিন পরেই তোমাকে সেটি জানানো হবে। ওয়েবসাইটে নিয়মিত কংগ্রেসের জন্য নির্বাচিতদের তালিকা আপডেট করা হতে থাকে। কনসেপ্ট পেপার জমা নেয়ার সময় শেষ হলে সর্বশেষ তালিকা অনুসারে সকল প্রতিযোগীর বাসায় চিঠি পাঠানো হয়।

কনসেপ্ট পেপার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে এই লিংকটা দেখতে পারো:

Coming Soon...

এ বছরের কংগ্রেসের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে চাইলে এই লিংকটা দেখতে পারো:

Coming Soon...

কংগ্রেসের মূল পর্ব

রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেসের মূল পর্ব আয়োজিত হয়। এই পর্বটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তবে নিজেদের গবেষণা নিয়ে অংশ নিতে পারে কেবল রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা।

কংগ্রেসের মূল পর্বটি দুই দিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমদিন শিক্ষার্থীরা তাদের গবেষণাকে পেপার, পোস্টার এবং প্রজেক্টের মাধ্যমে উপস্থাপন করে। আর দ্বিতীয়দিন অনুষ্ঠিত হয় যৌথ কংগ্রেস এবং পুরস্কার বিতরণী পর্ব।

ছবি: শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেস ২০১৬-এর যৌথ কংগ্রেস

পেপার

পেপার লেখার এই ফরম্যাটটা সার্বজনীন। গুগল স্কলার থেকে যখন ব্যাকগ্রাউন্ড রিসার্চ করার সময় অন্যদের রিসার্চ পেপার পড়বে তখনও বেশ ভালো ধারণা হয়ে যাবে। কংগ্রেসে পেপার উপস্থাপন করার সময় বিচারকদের তোমার লেখা রিসার্চ পেপারের তিন চারটা হার্ডকপি এবং একটা সফট কপি দিতে হয়। এরপর পাঁচ মিনিট সময় দেয়া হয় তোমার গবেষণা সম্পর্কে বলার জন্য। এসময় অনেকেই পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন ব্যাবহার করে। নির্ধারিত সময় শেষে বিচারকরা তোমার গবেষণা সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন। বিচারকদের পর তোমার রুমের অন্য অংশগ্রহণকারীরাও প্রশ্ন করতে পারে। তোমার রুমের সবার পেপার উপস্থাপন শেষ হয়ে গেলে আর কোন কাজ নেই- এবার পোস্টার, প্রজেক্ট ঘুরে দেখতে পারো।

কীভাবে রিসার্চ পেপার লিখতে হয় সেজন্য এই লিংকটা দেখতে পারো:

Coming Soon...

পোস্টার

পোস্টারের জন্যে আলাদা একটা রুম দেয়া হয়। সেখানে তোমার পোস্টারটা লাগাতে হয়। কংগ্রেস থেকেই এ ব্যাপারে যথেষ্ট সহায়তা করা হয়। চাইলে মাস্কিং টেপ, বাইন্ডার ক্লিপ নিয়ে আসতে পারো। পোস্টার প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত। প্রথম দিনের কার্যক্রম শেষ হওয়া পর্যন্ত অবশ্যই তোমাকে পোস্টার নিয়ে রুমে থাকতে হবে। এসময় অন্যরা এবং বিচারকগণ তোমার পোস্টার দেখবেন এবং তাদের সামনে প্রেজেন্টেশন দিতে হবে। কয়েকধাপে বিচারকাজ হবে। যেহেতু পোস্টারে সবকিছু সংক্ষেপে লেখা থাকে তাই তোমার ডাটাশিট আলাদা করে সাথে রাখতে পারো। দ্বিতীয় দিন পোস্টার আনতে হবে না।

পোস্টার তৈরির ব্যাপারে জানতে এই লিংকটা দেখ:

Coming Soon...

প্রজেক্ট

প্রথমদিনজুড়ে তোমাকে প্রজেক্ট প্রেজেন্টেশন করতে হবে। কয়েকধাপে বিচারকাজ চলবে। প্রজেক্টগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। প্রজেক্টের সাথে প্রজেক্ট রিপোর্ট, ডিসপ্লে বোর্ড, নোটবুক, ডাটাশিট রাখতে হবে। দ্বিতীয় দিন প্রজেক্ট আনতে হবে না।

কংগ্রেসের জন্যে একটা প্রজেক্ট কীভাবে তৈরি করতে হবে সেটা জানতে এই লিংকটা দেখ:

Coming Soon...

ফলাফল

কংগ্রেসের দ্বিতীয় দিন সকালে যৌথ কংগ্রেস এবং প্রশ্নোত্তর পর্বের পর ফলাফল ঘোষণা করা হয়। গত কংগ্রেসে নয়টি করে প্রজেক্ট, পোস্টার, পেপারকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। সেরা প্রজেক্টকে “প্রজেক্ট অফ দ্যা কংগ্রেস”, সেরা পোস্টারকে “পোস্টার অফ দ্যা কংগ্রেস” এবং সেরা পেপারকে “পেপার অফ দ্যা কংগ্রেস” নামক বিশেষ পুরস্কার দেয়া হয়।



ছবি: শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেস ২০১৬-এর বিজয়ীরা

জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞান ক্যাম্প

কংগ্রেসের নির্বাচিত ৩০-৪০ জন খুদে গবেষক নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় “জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞান ক্যাম্প”। তিন-চার দিনের এই আবাসিক ক্যাম্প সাধারণত কংগ্রেসের কিছুদিন পরেই অনুষ্ঠিত হয়। সত্যি বলতে কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় আকর্ষণই হচ্ছে ক্যাম্প করার সুযোগ পাওয়া।

ছবি: তৃতীয় জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞান ক্যাম্প

কংগ্রেস সম্পর্কে আরও জানতে চাইলে

কংগ্রেসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট:

https://cscongress.org

ফেসবুক পেইজ:

https://www.facebook.com/cscongressbd

বহু জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন:

Coming Soon...

যেকোন তথ্যের জন্য ইমেইল ঠিকানা:

info@spsb.org


লেখক—

ইশতিয়াক হোসেন আকিব

বিজয়ী, শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেস ২০১৩

বিজয়ী, শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেস ২০১৪

বিজয়ী, শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেস ২০১৫

পেপার অফ দা কংগ্রেস, শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেস ২০১৬

মেন্টর, শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেস