ধাপে ধাপে করতে হবে বিজ্ঞান প্রকল্পের কাজ
একটা বিজ্ঞান প্রকল্প তৈরি করতে গেলে তোমাকে ধাপে ধাপে আগাতে হবে। এখানে কীভাবে প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে হয়, তার একটা সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
চিন্তা করে বের করো, কোন প্রকল্পটা করতে তোমার কাছে ভালো লাগবে? যেটা ভালো লাগবে, তুমি সেটাই করবে। প্রকল্পের আইডিয়া বের করার জন্য ব্রেইনস্টর্মিং করতে হবে।
একটা বিজ্ঞান প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করার প্রথমেই একটা নোটবুক বানাতে হবে।
তুমি যখন একটা প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে শুরু করবে, তখন কিন্তু তোমাকে একটা নোটবুক বানাতে হবে। এই নোটবুকে তুমি প্রকল্প নিয়ে লিখবে তোমার নিজের সব চিন্তাভাবনা, প্রশ্ন, অনুভূতি, পরীক্ষানিরীক্ষার ফলাফল, গবেষণা করতে গিয়ে যেসব সমস্যা হয়েছে সেগুলি, প্রকল্পের অগ্রগতি, যেসব পরীক্ষা করতে গিয়ে তুমি ব্যর্থ হয়েছ সেসব—এককথায় তোমার প্রকল্প সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য।
পৃথিবীর ছোটোবড় প্রত্যেকটা সমস্যাই একেকটা প্রকল্পের আইডিয়া!
প্রকল্পের জন্য বিষয় নির্বাচন করতে গিয়ে প্রথমে তোমাকে বিজ্ঞানের কোন একটি শাখা বেছে নিতে হবে, যেমন: পদার্থবিজ্ঞান, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, রসায়ন। যে বিষয় নিয়ে কাজ করতে তুমি সবচেয়ে বেশি মজা পাও, সে বিষয়টা বেছে নিতে পারো।
এরপর প্রকল্পের নির্দিষ্ট বিষয় বেছে নিতে নিজেকে প্রশ্ন করতে পারো: আচ্ছা, এটা এরকম না হয়ে ওরকম হলে কেমন হতো? বা এটা এখন কেন করা যাচ্ছে না? যদি করতে হয়, তাহলে কীভাবে করা যায়? বা আচ্ছা, এই সমস্যাটা আমি কীভাবে সমাধান করতে পারি?
মনে রেখো, পৃথিবীর ছোটোবড় প্রত্যেকটা সমস্যাই একেকটা প্রকল্পের আইডিয়া!
অবৈজ্ঞানিক কোন কিছু নিয়ে প্রকল্প তৈরি করা যাবে না। যেমন ধরা যাক অবিরাম গতিযন্ত্র। একটা মেশিনে যতটুকু শক্তি দেয়া হয়, আউটপুট হিসেবে সবসময়ই পাওয়া যায় তার থেকে কম শক্তি। কিছু শক্তি ব্যবহারযোগ্য থাকে না – তাপ, আলো, শব্দ অন্য কোন শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। পৃথিবীতে (এবং পৃথিবীর বাইরে!) যত যন্ত্র আছে, সব যন্ত্রতেই এই ব্যাপারটা ঘটে। কাজেই এমন কোন যন্ত্র আসলেই বানানো সম্ভব নয়, যেখানে একবার কোন শক্তি ইনপুট হিসেবে দিলে সেই শক্তি ব্যবহার করে যন্ত্রটি আজীবন চলতে পারবে।
কাজেই তুমি যখন প্রকল্পের বিষয় নির্বাচন করবে, অবিরাম গতিযন্ত্রের মতো কোন বিষয় নিয়ে কিন্তু কাজ করা যাবে না! শুধু অবিরাম গতিযন্ত্র নয়, বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত কোন সূত্র কিংবা তত্ত্বকে লঙ্ঘণ করে, এমন কোন বিষয় নিয়েও কাজ করা যাবে না।
প্রকল্প নিয়ে গবেষণা করার সময় তোমাকে সায়েন্টিফিক মেথড বা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে মাপজোখ। বিজ্ঞানে “কাছে” বা “দূরে” বলতে কিছু নেই, আছে 5 মিটার কিংবা 15 কিলোমিটার। “অনেক বড়” বা “অনেক ছোট” বলতে কিছু নেই, আছে 10 বছর অথবা 55 বছর। “গরম” বা “ঠাণ্ডা” বলতে কিছু নেই, আছে 84 ডিগ্রি সেলসিয়াস কিংবা -5 ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বৈজ্ঞানিক কার্যপদ্ধতির বেশ কিছু ধাপ আছে। সেগুলি হচ্ছে:
প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা
প্রশ্নের বিষয়টা নিয়ে গবেষণা করা
হাইপোথিসিস বা অনুকল্প তৈরি
পরীক্ষানিরীক্ষা করার প্রস্তুতি নেয়া এবং পরিকল্পনা তৈরি
পরীক্ষানিরীক্ষা করা
পরীক্ষার ডেটা সংগ্রহ এবং লিপিবদ্ধ করা
সিদ্ধান্তে আসা
বৈজ্ঞানিক কার্যপদ্ধতি নিয়ে তুমি বিস্তারিত জানতে পারবে এখানে।
বিজ্ঞান প্রকল্পের সাথে অবশ্যই একটা রিপোর্ট সাথে নিয়ে আসতে হবে
একটা প্রকল্প বানানোর পর তোমাকে সেটা নিয়ে একটা আনুষ্ঠানিক রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। এই রিপোর্টে নিচের জিনিসগুলি থাকতে হবে:
টাইটেল পেইজ (শিরোনাম পাতা)
প্রকল্পের সারমর্ম/সংক্ষিপ্ত বিবরণ
সূচিপত্র
প্রাথমিক আলোচনা
বৈজ্ঞানিক কার্যপদ্ধতির ধাপ অনুযায়ী বিস্তারিত আলোচনা
পরীক্ষানিরীক্ষা করার সময় যেসব সমস্যা হয়েছে, সেসব নিয়ে আলোচনা
উপসংহার
তথ্যসূত্র
কৃতজ্ঞতা
প্রকল্পের রিপোর্ট তুমি হাতে লিখে কিংবা কম্পোজ করে আনতে পারো - কীভাবে আনবে, এটা তোমার ইচ্ছা। কম্পোজ করে আনলে সাথে একটা সফট কপি পেনড্রাইভে রাখা ভালো। রিপোর্ট কতো পৃষ্ঠা হবে, সেটার কোন নির্ধারিত সীমা নেই, ৫ পৃষ্ঠাও হতে পারে, ১৫ পৃষ্ঠাও হতে পারে। তোমার প্রকল্পের ধরণের উপরে সেটা নির্ভর করছে।
যেমন হবে ডিসপ্লে বোর্ড
তুমি যখন বিজ্ঞান কংগ্রেসে যাবে, তখন তোমার প্রকল্পটা দেখে কোন দর্শনার্থী যাতে বুঝতে পারে তুমি কী নিয়ে কাজ করেছ, সেটার জন্য তোমাকে একটা ডিসপ্লে বোর্ড বানাতে হবে। তুমি এজন্য শক্ত কাগজ বা বোর্ড পেপার ব্যবহার করতে পারো, কিংবা পিভিসিতে প্রিন্ট করেও আনতে পারো। একটা নমুনা ডিসপ্লে বোর্ডের ছবি এখানে দেয়া আছে। এছাড়া তোমাকে সাথে রাখতে হবে তোমার নোটবুক, বিজ্ঞান প্রকল্পের রিপোর্ট, মন্তব্য খাতা, কলম, পেনসিল, মাস্কিং টেপ, কাচি, রশি ইত্যাদি।
ডিসপ্লে বোর্ড এর সাইজ ২৪ ইঞ্চি বাই ৩৬ ইঞ্চি বা কাছাকাছি মাপের হতে পারে।
তুমি যদি বিজ্ঞান প্রকল্প নিয়ে কংগ্রেসে অংশ নাও, কিন্তু সাথে প্রকল্পের রিপোর্ট এবং ডিসপ্লে বোর্ড না আনো, তাহলে তুমি পুরো মার্ক পাবে না। যেসব ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ করে শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেসে বিজ্ঞান প্রকল্পের বিচারকাজ করা হয়, তার মধ্যে প্রকল্পের রিপোর্ট এবং ডিসপ্লে বোর্ডের জন্যে আলাদা মার্ক থাকে। একইরকমভাবে তুমি যদি প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বৈজ্ঞানিক কার্যপদ্ধতি অনুসরণ না করো, তাহলেও তুমি মার্ক হারাবে। কাজেই এই এই ব্যাপারগুলো ভালোভাবে মাথায় রেখো।
তোমার প্রকল্পের জন্যে দরকারী বিদ্যুৎ সংযোগ তোমাকে বরাদ্ধ দেয়া টেবিলে দেয়া থাকবে। তোমার প্রকল্প যদি আইটিভিত্তিক হয়, তাহলে সাথে ল্যাপটপ রাখতে পারবে।
শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেসে তোমার/তোমার দলের প্রকল্পটি বেশ কয়েকবার বিচার করা হবে। বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির অ্যাকাডেমিক টিমের সদস্যরা এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক এবং বিজ্ঞানীরা এই বিচারকাজ করবেন। কাজেই কংগ্রেসের প্রথম দিনে উদ্বোধনের পর থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তোমার প্রকল্পকে তোমাকে বরাদ্ধ দেয়া জায়গায় রেখে দিতে হবে। বিকেল ৫টার আগে তুমি প্রকল্প সরিয়ে নিতে পারবে না।
কংগ্রেসের দ্বিতীয় দিনে তোমাকে সাথে করে প্রকল্প নিয়ে আসতে হবে না।
লেখক—
কংগ্রেসের সায়েন্টিফিক কমিটির সদস্য