বৈজ্ঞানিক প্রজেক্টের রিপোর্ট

রিপোর্ট লিখতে যেয়ে অনেকেই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হও। তাদের জন্য কিছু দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে, যেগুলো আশা করি সহায়ক হবে।

তোমার প্রোজেক্ট রিপোর্টে নিচের জিনিসগুলো অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে

-টাইটেল পেইজ (শিরোনাম পাতা)

-প্রকল্পের সারমর্ম/সংক্ষিপ্ত বিবরণ

-সূচিপত্র

-প্রাথমিক আলোচনা

-বৈজ্ঞানিক কার্যপদ্ধতির ধাপ অনুযায়ী বিস্তারিত আলোচনা

-পরীক্ষানিরীক্ষা করার সময় যেসব সমস্যা হয়েছে, সেসব নিয়ে আলোচনা

-উপসংহার

-তথ্যসূত্র

-কৃতজ্ঞতা

প্রথমেই দিতে হবে একটি শিরোনাম পাতা বা টাইটেল পেইজ। এরপর আসবে প্রকল্পের সারমর্ম (Abstract) বা সংক্ষিপ্ত বিবরণ। এখানে লিখবে একদম সহজ ভাষায় প্রজেক্ট এর মূল কাজ কি দেখাতে চেয়েছো, কিভাবে চেয়েছো প্রভৃতি।

এরপর সূচিপত্র। এখানে পৃষ্ঠা নাম্বার অনুযায়ী সবকিছু সাজিয়ে তথ্যগুলো দেয়ার চেষ্টা করবে। যাতে এক নজর দেখে বুঝা যায় কোথায় কোন প্রয়োজনীয় তথ্য একজন মানুষ পাবে।

প্রাথমিক আলোচনায় বলতে হবে প্রকল্পটিতে কি সমস্যা নিয়ে কাজ করেছো তুমি। অল্প করে গুছিয়ে সেটি নির্বাচনের কারণ লিখতে হবে। এছাড়াও, গবেষণা করার সময় কোন পদ্ধতি নিয়ে কাজ করেছো এসম্পর্কেও লিখতে পারো।

এরপর আসবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বৈজ্ঞানিক কার্যপ্রণালির ধাপ অনুযায়ী বিস্তারিত আলোচনা।

এখানে একদম শুরু থেকে কি কি বৈজ্ঞানিক ধাপ তুমি অবলম্বন করেছো সে ব্যাপারে বলবে। কোন থিওরি ব্যবহার করেছো বা পরীক্ষাটি কিভাবে করেছো সে ব্যাপারে তোমার নিজের পদক্ষেপ গুলো লিখতে হবে। আদর্শ একটা তাত্ত্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে আমরা সচরাচর কাজ করি। সেটা সম্ভব না হলে সেই তথ্যও উল্লেখ করতে হবে। যাতে সম্পূর্ণ গবেষণার ব্যাপারে একটা সম্যক ধারণা পাওয়া যায়।

এরপর পরীক্ষা নিরীক্ষায় যেসব সমস্যার সম্মুখীন তুমি হয়েছো সেসব বলার চেষ্টা করবে। খুবই স্বাভাবিক ভাবে অনেক কিছুই প্রথম চেষ্টায় তুমি হয়তো কিছু ভুল করেছো সেগুলো বলতে পারো এখানে। কোনো বৈদ্যুতিক বর্তনীর সংযোগ কিংবা কোনো কিছুর সময় নির্ণয়ে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকলে সে ব্যাপারেও বলতে পারো বিশেষ ভাবে।এভাবে সমস্যাগুলো উঠে আসবে।

উপসংহার এ বলার চেষ্টা করবে কাজ শেষে তোমার সার্বিক প্রজেক্ট এর কি অবস্থা। তোমার প্রাথমিক ধারণার সাথে এক্সপেরিমেন্ট শেষে প্রকল্পের বর্তমান অবস্থার তুলনা করে সে বিষয়ে লিখতে পারো এখানে।

তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তথ্যসূত্র। তুমি যেসব তথ্য ব্যবহার করে সম্পূর্ণ কাজটি করেছো সেগুলোর উৎস (source) এখানে লেখার চেষ্টা করবে। সেগুলো সঠিকভাবে উপস্থাপন করা দরকার। কারণ যেসকল তথ্য বা উপাত্ত তোমার কাজে লেগেছে সেসবের সঠিক মূল্যায়ন নাহলে হবে না। বিচারকেরা এটা দেখে তোমার গবেষণার সময় কতটুকু ব্যাকগ্রাউন্ড স্টাডি করেছো সেটার ধারণা পাবেন।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার : এটা আসলে আমাদের কাজে যারা বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের চেষ্টা। কারণ অনেকের সহায়তা ছাড়া হয়তো এই প্রজেক্ট সম্পন্ন হতো না। সেজন্যই এই অংশ।

এছাড়াও, যদি তুমি একটি আইটি প্রোজেক্ট সাবমিট করো, যেখানে তোমাকে কোন প্রোগ্রামিং করতে হয়েছে অথবা হার্ডওয়্যার নিয়ে কাজ করতে হয়েছে, তাহলে তোমাকে আরও কিছু বিষয় উল্লেখ করতে হবে প্রোজেক্ট রিপোর্টে -

-প্রোজেক্টে ব্যবহৃত সফটওয়্যারের নাম ও ভার্সন

-প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের নাম

-প্রোজেক্টের সম্পূর্ণ কোড অনলাইনে দেখার লিংক

-কোডের গুরুত্বপূর্ণ অংশের ব্যাখ্যা

-সকল হার্ডওয়্যার ডিভাইসের তালিকা

-ব্যবহৃত হার্ডওয়্যার সমূহের ব্লক ডায়াগ্রাম

-আইটি প্রোজেক্টের ক্ষেত্রে কোড অনলাইনে তুমি জমা রাখতে পারো পেস্টবিনে অথবা গিটহাবে

-হার্ডওয়্যার সমূহের ব্লক ডায়াগ্রাম চাইলে হাতে ছবি একে ছবি তুলে রিপোর্টে যুক্ত করে দিতে হবে অথবা যেকোনো অনলাইন সিমুলেশন টুল ব্যবহার করা যেতে পারে।


লেখক—

মিশাল ইসলাম

(মেন্টর, শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেস)